Prospects of Computer Science and Engineering (CSE)

Wednesday, December 26, 2012

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়(ইবি) ও কিছু অপ্রিয় সত্য

 বেশ কিছুদিন পর আজ লেখার সময় পেলাম। আর তাই আজ আমার বিশ্ববিদ্যালয় ইবি কেই বেছে নিলাম। এই বিশ্ববিদ্যালয় টিতে আমার শিক্ষা জীবনের বেশ কিছু সময় কেটেছে, প্রায় ৪ বৎসর। আর তাই নিজের স্মৃতির টানেই এখানকার যে কোন খবর কিভাবে যেন আমার সামনে চলে আসে। প্রায় ৪ মাস যাবৎ আমার এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ক্লাস পরীক্ষা হয় না। আর এটাতে শিক্ষা মন্ত্রালয় বা এখানকার প্রসাসনের কোন কার্যকারী মাথা ব্যাথা নেই, শিক্ষার্থীরা যে বিষয়টা নিয়ে একটু লাফালাফি করবে তার সাহস করতে দ্বিধাবোধ করছে কারন সৃষ্ট সমস্যার মূলে আছে রাজনৈতিক স্বার্থ। তবুও শিক্ষাজীবন, ভবিষ্যৎ আর পরিবারের কষ্টের কথা চিন্তা করে এখন সবাই ক্ষুদ্ধ। 

আমার জানা মতে সৃষ্ট সমস্যাগুলো হলো:-

(১) ছাত্রলীগের দলীয় নিয়োগ বাধাগ্রস্থ হবার জন্য কর্মীদের ক্যম্পাস ভাংচুর এবং গাড়ীতে আগুন, এখান থেকেই যাত্রা শুরু।

(২) কিছু শিক্ষকের স্বার্থ রক্ষা না হবার কারনে (অর্থ বা পছন্দের প্রার্থী নিয়োগ) তাদের ক্লাস বর্জন এবং শেয়ালের লেজ কাটার গল্পের মতো তাদের প্যানেলের সব শিক্ষকদের আন্দোলনে একত্রিত করে সকল বিভাগের ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করা।

(৩) ছাত্রলীগ কতৃক শিক্ষকদের কর্মসূচীতে হামলা এবং প্রসাসনের সাথে দলীয় সম্প্রীতি ও শিক্ষকদের উপর ক্ষমতার জের ধরে রাখার চেষ্টা।

(৪) একসময় সর্ব মহল থেকে ভিসির পদত্যাগের দাবি আসলেও তিনি অনড় স্বপদে, আর এই মর্মে কিছু শিক্ষকের স্বার্থ ক্ষুন্ন হবার জন্য ক্লাস বর্জন অব্যহত।

(৫) শিক্ষাজীবন আর বাবা-মায়ের কষ্টের উপার্জন শ্রাদ্ধ করার জন্য শিক্ষার্থীদের ভিসি বিরোধী আন্দোলন কর্মসূচী আর শিক্ষকদের ক্লাসে ফেরার জন্য আহবান।
আমি বিশ্বাস করি এই আন্দোলন কোন দলীয় বা স্বার্থন্বেষী শিক্ষকদের পক্ষের আন্দোলন নয় এটা দ্রুত ক্লাস পরীক্ষা শুরু করার আন্দোলন। কারন দেয়ালে পিঠ ঠেকা ১২০০০+ ছাত্রের কাছে পরিবার বা দেশের থেকে রাজনীতি বড় হতে পারেনা।

এখন আসা যাক কিছু অনৈতিক বিষয়ে:-

(১) আমার জানা মতে ইবিতে অর্থনীতি (MBA), ইনপরমেশন-কম্পিউটার-ফলিত পদার্থ (MIS, PGDIT, Open University IT Program) বিভাগের, এবং ব্যবসায় প্রসাসন ফ্যাকাল্টির (MBA, EMBA) সহ অনেক প্রফেশনাল/সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু আছে যেগুলোতে মোটামুটি শিক্ষাগত যোগ্যতা আর টাকা দিয়ে যে কেও ভর্তি হতে পারে। আর এই কোর্সগুলো এসব বিভাগের শিক্ষক দ্বারাই পরিচালিত। তারা এগুলো থেকে প্রতি ক্লাস অথবা একটি নির্দিষ্ট চুক্তিতে সম্মানি নেন যা তাদের একটি অতিরিক্ত আয়ের উৎস। এই অতিরিক্ত ইনকামটা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন বলেই হয়ত আমি দেখেছি আমাদের ক্লাসের সময় তাদের ডিপার্টমেন্টে না পাওয়া গেলেও সেখানকার ক্লাসগুলোতে তাদের ১০০% উপস্থিতি। 
তাহলে কি আমরা ভাবব আপনারা মানুষ গড়ার মূলমন্ত্র থেকে বিচ্যুত হয়ে ব্যাংক ব্যালেন্সের স্বপ্নে কাতর? আর তাই দরিদ্র ঘরের মেধাবী ছেলেটার শিক্ষার থেকে চাকরীতে বেশী কামানোর স্বপ্ন দেখা মানুষটা আপনার কাছে বেশী প্রিয়।

(২) ঠিক এই মুহুর্তে যখন ১২০০০+ ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষাজীবন অন্ধকারে তখন বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইট আর 
বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ইবির অর্থনীতি, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তি বিজ্ঞাপন দেখে লজ্জা পেলাম। সেখানকার ক্লাসগুলো কি ক্যাম্পাসের বাইরের কোন ভবনে নেয়া হয়, না ভাড়া করা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ক্লাস নেন?
খুব জানতে ইচ্ছা করে এক্ষেত্রে কোথাই গেল শিক্ষকদের ভিসি বিরোধী আন্দোলন আর ক্লাস বর্জন? তারা কিভাবে প্রসাসনের সাথে একত্রিত হয়ে মিডিয়াতে নতুন ছাত্র ভর্তির বিজ্ঞাপন দেন?
নাকি সব আন্দোলন আর দলীয় বক্তৃতা শুধুই সাধারন ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য?

খুব সহজ একটা সারাংশ উত্তর আছে আমার মনে, যেটা হল:
ওই কোর্সগুলোতে টাকা পাওয়া যায় ক্লাস/ব্যাচ হিসাব করে আর বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানী পাওয়া যায় শিক্ষক রেজিষ্ট্রি খাতাই নাম থাকলে। তাই সেটাতে নাম অক্ষুন্ন থাকলেই হলো সম্মানী সংরক্ষিত থাকবে, কি দরকার এইসব ছা-পোষা ১২০০০+ ছাত্রের জীবন নিয়ে চিন্তা করে।

(৩) আমার মতে ইবির শিক্ষকেরা টাকা আর ক্ষমতার লোভে এই মহান পেশাকে কলুষিত করছেন। দূর্নীতি করছেন দেশের ১৫.৫ কোটি মানুষের সাথে কারণ আপনাদের সম্মানীর বেশীর ভাগ অংশটাই আসে দেশের খেটে খাওয়া মানুষের পকেট থেকে, আমরা ব্যাপারটা বুঝি আর তাই এই জীর্ন দেশটাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি। কিন্তু ভয় পায় আপনাদের মত ক্ষমতার শিক্ষা পেয়ে যেন স্বার্থপর না হয়ে যায়। আজ যে ভিসি বিরোধী আন্দোলন চলছে তিনি কিন্তু এ বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষক, তিনিও অতীতে আপনাদের মতই ক্ষমতাই বিশ্বাস রাখতেন আর তাই অভীষ্ট লক্ষে পৌছানের পরে নিজ স্বপ্নটাকে ধরে রাখার চেষ্টা করছেন, কিছু করছেন নিজ ক্ষমতায় আজ কিছু দলীয় চাপে। তাকে আমি একক ভাবে দোষ দিবনা কারন আপনাদের বর্তমান আর তার অতীত একই। আপনারা এখন দেশের মানুষকে ঠগাচ্ছেন আর তার পর্যায়ে গেলে ভাল মানুষ হয়ে যাবেন, নতুন করে স্বপ্ন দেখতে পারবেন সেটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।

(৪) আমি মাঝে মাঝে চিন্তা করি কি এমন ক্ষতি হয় যদি সরকার এই বিশ্ববিদ্যালয় টিকে এই সেশন থেকে বন্ধ করে দেয়। এখানকার বাজেট গুলো ভাল ৫টা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে দেয়া হয় তাদের সেশন চার্জ আর সাবজেক্ট বাড়ানোর জন্য, যাতে অন্তত মধ্যবিত্ত আর অতি দরিদ্র(ফলাফলের ভিত্তিতে) শিক্ষার্থীরা ভাল একটা পরিবেশে কিছু শিখতে পারে। সাধারন শিক্ষার্থীরা বাধ্য না হলে মিছিল করেনা রাস্তায় নামেনা আজ তাদের পরিবারের যদি সামর্থ থাকত তাহলে নিশ্চয় পছন্দের বিষয়ের জন্য চার দেয়ালের ঘরটাকেই বেছে নিত। আপনারা(শিক্ষকেরা) কেন তাদের শুধু শুধু ক্ষমতা আর দূর্ণীতির ব্যবহারিক জ্ঞান দিচ্ছেন? তারা তো শুধু আপনাদের মধ্যকার ভালো মনুষটাকে খুজে পেতে চায়, শিক্ষা নিতে চায় তার থেকে, এই দেশকে কিছু দেবার জন্য। যদি ইবি তে থেকে না করতে পারেন তবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। 

কিন্তু এখানেও আমরা সন্দেহ আছে, সেরা ১০ টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনারা যোগ্যতার বিচারে ৯৫% শিক্ষকই অযোগ্য বিবেচিত হবেন কারন এসব যায়গায় দলীয় ক্ষমতার থেকে শিক্ষাগত, গবেষণা আর আর্থ-সামাজিক বিষয়গুলোকে বেশী প্রাধান্য দেয়া হয়। ইবিতে ক্ষমতা আর ব্যাক্তিগত স্বার্থ বিবেচনায় রেখে শিক্ষক মহাদয়গণ এই তিনটা বিষয় প্রায় ভুলে গেছেন। 

আমার মতে শিক্ষকতা পেশা একটা চাকরি নয় বরং দেশের বা সমাজের জন্য ভাল কিছু করার একটা দায়িত্ব, একটা ব্রত। যদি সেটা না করতে পারেন তবে জীবনে টাকা/ক্ষমতা কামানোর অনেক পথ আছে, অন্য যেকোন একটাকে বেছে নেন, দয়া করে এই মহান পেশার সৌন্দর্য নষ্ট করবেন না।

আমি বিশ্বাস করি আমার এই লেখাটা যদি কোন শিক্ষক অথবা কোন প্রশাসনিক কর্মকর্তা পড়ে থাকেন তবে তার মনে অবশ্যই প্রশ্ন জাগবে-আমি কে, এই কথাগুলো বলার বা আমার কি যোগ্যতা আছে এগুলো নিয়ে লেখার?
শেষে আমি এই উত্তরটা দিতে পারি এইভাবে:
আমি ইবির একজন প্রাক্তন ছাত্র এবং একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য। তাই আমি খুব সহজেই এখানকার ১২০০০+ ছাত্র-ছাত্রীর মানসিক অবস্থানটা অনুধাবন করতে পারি। এখানকার বর্তমান শিক্ষার্থীরা একটা মনোবলে এখন দৃঢ় যে তাদের পারিবারের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর মত সামর্থ থাকলে আদৌ তারা ইবিতে ভর্তি হবার মত ভুল করত না।

শিক্ষকদের অনুরোধ করে বলতে চায় শিক্ষার্থীদের এই অনুশোচনা থেকে বের হয়ে আসতে সাহায্য করুন। আপনাদের পেশা আর দশটা সাধারন পেশার মত নয়। আপনারা শিক্ষার্থীদের নতুন দিনের স্বপ্ন দেখাবেন, তাদের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা প্রতিভা দিয়ে সেই দিনের যোগ্য অগ্রজ হবার দিকনির্দেশনা দিবেন এটাই সমাজের সব মানুষের কাম্য। 

আর যদি মানুষকে ভবিষ্যৎ স্বপ্ন দেখাতে না পারেন তাহলে বলব এই পেশাটা আপনার জীবনের সঠিক নির্বাচন ছিল না, অন্য কিছু করেন শেষ জীবনে সুখী থাকবেন।
আমরা আপনাদের দেখতে চায়- "মানুষ গড়ার কারিগর হিসাবে, রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে নয়।"

---ইবির একজন প্রাক্তন ছাত্র।