Prospects of Computer Science and Engineering (CSE)

Friday, January 4, 2013

বেকার টেলিভিশন (বি.টিভি) এবং তার নাট্যতত্ত্ব


বিপদে পড়ে আজ দুপুরে বি.টিভির সংবাদ দেখতে বসে কিছু বিষয় আবিষ্কার করলাম:-
(১) বি.টিভি এখন সংবাদ এর জন্য কিছু ছোট ছোট "এ্যাড ফিল্ম" ও বানাই দলীয় নাট্যশিল্পী খুজেঁ বের করার জন্য! যাদের নাটকের মূল সারাংশ হল বিরোধী দলকে সুক্ষভাবে গোঁতা দেওয়া। এমনিতেই ৩০ মিনিটের খবরে ২০ মিনিট সরকারের গুনকীর্তন করা হয় (বাকি ৫ মিনিট আন্তর্জাতিক ও ৫ মিনিট খেলার খবর দেখাতে হয়, না হলে হয়তবা গোটা ৩০ মিনিট) তার উপরে আবার জনগনের মনে তুলসী পাতার পানি ছিটানোর জন্য বিভিন্ন নাটক মঞ্চায়ন। দেখে বোঝার উপায় নেই এটা কোনো জাতীয় টিভি চ্যানেল না সরকারী নাট্যমঞ্চ!

খবরে সরকারের উন্নয়নের বন্যার সাথে এখন মৃদু ঝাড়-ফুক এর ও উপদ্রপ দেখা দিয়েছে। এত নিখুঁতভাবে প্রতিবেদন গুলো দেখানো হয় যে বুঝা মুসকিল আমরা খবর শেষে ধারাবাহিক নাটকের বাকি অংশ দেখতে শুরু করলাম না, এটাও খবরের মাঝের অংশ ছিল!
দেশের কোথাও বড় কোন দূর্ঘটনা ঘটলে দেখানো হয়, তবে সরকারী তৎপরতার ফুটেজ গ্রহনের পর! এ যেন সরকারী কর্তাব্যক্তিদের ঘামের(!) টাকায় চালানো একটি অঙ্গ-সংগঠন, যে ঘাম তাদের মাঠে-ঘাটে কাজ করার পর কিছু বিনোদনের জন্য ছুটেছে। আর তাদের কে প্রতিদান দেওয়া এ চ্যানেলের নৈতিক চামচামির উদাহরন বলব এতটা স্বার্থপর আমরা বাঙালী জাতি নই।
এই চ্যানেলের পরিবেশনা গুলো সরকারের মঙল মন্ত্র পাঠের সাথে সাথে দেশের দরিদ্র জনগণকে সঠিক এবং তাৎক্ষনিক তথ্য দিয়ে ধন্য করবে এই আশা করাটা বোধ হয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কোন অন্যায় আবদার না। প্রয়জনে ৩০ মিনিটের খবর, সময় বাড়িয়ে ১ ঘন্টা করা যেতে পারে -যারা কোন দল পছন্দ করে না তারা না হয় ২০ মিনিট পরেই টিভি চালু করবে দেশের খবর পাবার আশায়!

(২) বেশ কিছু দিন আগে (প্রায় ১ বছর) আমাদের দেশে একটি টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার শুরু হয়েছে যার নাম-সংসদ টেলিভিশন। যাদের বাসায় কেবল সংযোগ আছে তারা হয়ত ইতি মধ্যেই এই চ্যানেলের সুন্দর লাল-সবুজ লোগো আর জাতীয় সংঙ্গীত এর ধ্বনি শুনেছেন কারণ দিনের বেশীর ভাগ সময়ই চ্যানেল টি টেলিকাষ্ট ঠিকই হয় কিন্তু কোন অনুষ্ঠানসূচী থাকে না!
সন্ধায় যে কয়েক ঘন্টার জন্য অনুষ্ঠান প্রচারিত হয় তার প্রায় দিনেই থাকে বিগত সংসদ অধিবেশন গুলোর পুনঃপ্রচার আর মহান সংসদ চলাকালীন সময়ে অধিবেশন এর সরাসরি সম্প্রচার এবং (মাঝে মাঝে দেশের গান)। তাহলে আমার মতে এখানে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো জাতীয় সংসদ অধিবেশনের সরাসরি সম্প্রচার যেটা বি.টিভি প্রথম থেকেই করে আসত এখনও নিয়মিত করে বোধ হয়, বিষয়টা আমার জানা নেই।

(কেন দেশের নাগরিক হবার পরেও জানিনা করণটা নিচে জানালাম: )
এক বন্ধুর সুবাদে গত বছর ঠিক এমন সময়ে আমার সংসদ ভবনের ভিতরে ঢোকার সুযোগ হয়েছিল। তখনকার একজর মন্ত্রী(কিছুদিন আগে পদত্যাগ করেছেন) সাহেবের সাথে তার খুব ভাব, আমি নতুন মূর্খ মানুষ প্রথম গেছি মহান সংসদ ঘুরে ফিরে দেখতে তার উপর আবার সে অফার করল সংসদ অধিবেশন চোখের সামনে (হাত দশেক দূর হতে) দেখার জন্য! সূবর্ণ সুযোগটা হাত ছাড়া করার কোন যুক্তিই আমার কাছে ছিল না কারণ টিভি তে শুধু যিনি বক্তৃতা দেন তাকে ফোকাস করা হয়, আমি দেখতে চেয়েছিলাম ঠিক ঐ সময় তার বিপতীত পাশে বসে থাকা সাংসদরা কি করেন!

কিছুক্ষনের মধ্যে ঐ মন্ত্রীর পি.এস আমাকে সংসদ অধিবেশন দর্শনার্থী গ্যালারীতে বসে দেখার একটি পাস নিয়ে এসে দিলেন, আমি বীর দর্পে যে বিশাল জায়গাটাতে অধিবেশন হয় তার গেটের দিকে হেটে গেলাম। ভিতরে গিয়ে বসার পরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হল আর এমন একটি মহান স্থাপনা দেখার সুযোগ করে দেবার জন্য আমার সেই বন্ধুটিকে মনে মনে ধন্যবাদ জানালাম।

তখন দেখেছি বেশ বড় সড় দুইটা ক্যামেরাই অধিবেশন সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছে। প্রথম প্রথম খুব উপভোগ করলাম, কিছুক্ষন পরে খেয়াল করলাম যিনি বক্তৃতা দেন মানে ক্যামেরা যার দিকে থাকে তিনি সহ তার আশেপাশের সাংসদরা বেশ সুশৃঙ্খল ভাবে বসে থাকেন আর তার বিপরীত পাশের সাংসদরা যেটা করেন তা হল:-চায়ের আড্ডা বলতে পারেন...(একে অন্যের সাথে খোশগল্প, সাংসারিক খোজঁখবর ইত্যাদি)। আর মহিলা সাংসদরা ১০-১৫ জন এক জায়গায় বসলে কি আলোচনা করতে পারেন তা বোধ হয় আমারা আমাদের মা-খালাদের জোট বেধে বসা দেখলেই অনুধাবন করতে পারি। তো এই যখন অবস্থা কোন মতে অধিবেশন শেষ করে বের হলাম, তখন বেশ কয়েকজন নামী-দামী সাংসদকে স্বচক্ষে দেখলাম-ধন্যবাদ বন্ধু তোমাকে আরেকবার!

আমি জানিনা বা জানার চেষ্টা করিনি কখনও এই অধিবেশন গুলো টিভিতে দেখে জনগন কিছু নিতে পারে কিনা, মনে হয় পারে! তবে প্রশ্ন কতটুকু পারে?

মনে হয় বি.টিভি তে সংসদ অধিবেশন দেখতে আমাদের খুব একটা সমস্যা হত না আর সেটা গোটা দেশের মানুষও দেখতে পরে বিনা খরচায়। অন্যদিকে 
সংসদ টেলিভিশন দেখতে কেবল লাইনের প্রয়োজন যেটা মাঠে/ঘাটে কাজ করা কৃষকের পক্ষে ব্যবস্থা করা এখনও ১০০ ভাগ সম্ভব না।

যেটা বস্তুতপক্ষে ৯৯.৯%(অনেকই ইচ্ছাকৃত ভাবে দেখেন না) জনগনের কোন কাজে আসছে না। তাহলে কেন আমরা বাড়তি একটা টিভি চ্যানেল অপ্রয়োজনে সম্প্রচার করে জনগণের টাকার শ্রাদ্ধ করছি? 

এ মাসের প্রথম সপ্তাহেই তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে সরকার কি পারত না বাংলাদেশের জন্য অপ্রয়োজনীয় এ টিভি চ্যানেল টির সম্প্রচার আপাতত বন্ধ করে দিয়ে জনগণের সেই অর্থটা তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ এর ভর্তুকি খাতে ব্যায় করতে ?
তাতে অন্তত তাদের উপর কিছুটা হলেও চাপ কমত আর কয়েকজন তাদের মেরুদন্ড এই যাত্রাই রক্ষা করার জন্য সরকার কে নাটকের হিরোর চরিত্রে আসীন করত!

যাক আজ সকালে একটা ভাল সংবাদ শুনেছি ঘুম থেকে উঠেই, এবছর বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমান ১৪২১ কোটি ইউ.এস ডলার যা এই পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য একটি রেকর্ড। ধন্যবাদ প্রবাসীদের যাদের পাঠানো অর্থ আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। হয়তবা অর্থনীতির এই সুসময় গুলো না আসলে বিদ্যুতের পরিবর্তে সূর্যের আলোই হতো দেশের ৫০% মানুষের একমাত্র ঘরের আলো।
পরিশেষে রাজনৈতিক দলগুলোকে করজোড় করে বলি অনেক তো হলো, আসুন না এবার দেশের মানুষের ঘামে ভিজানো টাকাগুলো দিয়ে তাদের জন্যই ১০০% বিশুদ্ধ ভাল কিছু করি........